উত্তর রোয়াইল রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

রামকৃষ্ণ শরণম্। পৃথিবীব্যাপী শ্রীরামকৃষ্ণ ভাবগঙ্গার আরেকটি ঢেউ আছড়ে পড়লো বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গ খ্যাত টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম উত্তর রোয়াইলে। তৎকালীন রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা'র দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পূজনীয় শ্রীমৎ স্বামী অক্ষরানন্দজী মহারাজের স্নেহধন্য ছিলেন শ্রীমান প্রকাশ চক্রবর্তী। পূজনীয় স্বামী অক্ষরানন্দ মহারাজের ছত্রছায়ায় নিজেকে স্বামীজীর আদর্শে তৈরী করেন। পরবর্তীতে পূজাপাদ মহারাজের আশিবাদ নিয়ে প্রকাশ চক্রবর্তী চলে গেলেন সুদূর আমেরিকার নিউইয়র্কে।
মাতৃভূমি ছাড়লেও হৃদয়ে ধারণ করা স্বামীজীর আদর্শের প্রজ্বলিত শিখা আমেরিকাতেও ফুরন ঘটালেন। প্রকাশ চক্রবর্তী সেখানে সেবার ব্রত নিয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন "বিবেকানন্দ স্টাডি এন্ড ফিলান্ত্রোপিক সেন্টার অফ নিউইয়র্ক"। সেবার কার্যক্রম ছড়িলে পড়ল আমেরিকা, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাম্বিয়া নেপালসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে।
একসময় সূদূর আমেরিকায় থাকলেও মাতৃভূমির প্রতি তার সেবার দায়িত্ববোধ জাগ্রত হয়ে উঠলো। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৯মার্চ উত্তর রোয়াইল গ্রামবাসীর সহযোগিতায় ২৩.৭৬ ডেসিমেল জায়গায় প্রতিষ্ঠা করলেন " উত্তর রোয়াইল রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম” আশ্রম প্রতিষ্ঠার জন্য জায়গা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। বহুজনকে বলেও মন্দিরের জায়গার জন্য রাজী করনো গেল না। ওইসময় শ্রীমান প্রকাশ চক্রবর্তীর গর্ভধারিনী শ্রীমতী সুহাসিনী দেবী একটা পঁচা ডোবার দিকে আঙ্গুল তুলে বললেন-"তোরা মন্দিরের জায়গার জন্য অপেক্ষা করছিস কেন? আমাদের জায়গার কি অভাব আছে। যেমনটা স্বামীজীর যেকোন সমস্যা সমাধানে শ্রীমা সারদা দেবী ভূমিকা ইচ্ছার সমাধানে তার মায়ের ভূমিকা ও তদ্রুপ।
শ্রীমতী সুহাসিনী দেবীর এই প্রস্তাবের ভিত্তিতেই শ্রীমান প্রকাশ চক্রবর্তীর বড় মামা শ্রীভবেশ চক্রবর্তী ও মেঝ মামা শ্রীমেঘলাল চক্রবর্তী (তিনি বর্তমানে অত্র আশ্রমের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন) পচাডোবার মালিকদের সবাইকে ডেকে আশ্রমে প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেওয়াতে সবাই আনন্দচিত্তে জায়গা দিতে সম্মত হলো। পরবর্তীতে "রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম, উত্তর রোয়াইল, মির্জাপুর, টাঙ্গাইল" এর নামে রিজিষ্ট্রি করা হলো যার জমি মোট পরিমান ছিল ২৩.৭৬ ডেসিমল। বর্তমানে জমির পরিমান বেড়ে দাড়িয়েছে ৫৩.৩৯ ডেসিমল।
সকলের সহযোগীতায় মাটি ভরাট করে ২০১৯ সালে দূর্গাদেবীর আগমনীবার্তা শুভমহালয়া দিন প্রথমবারের মত স্থায়ী প্যান্ডেল স্থাপন করে শ্রীশ্রীঠাকুর, শ্রীশ্রীমা ও স্বামীজীর ষোড়শোপচারে পূজা করলেন ব্রহ্মচারী বিবেক মহারাজ। পরবর্তীতে ১৭ হাত পাকা মেঝে করে চার চালা টিনের মন্দির নির্মান করা হয়। সেইদিন-ই শ্রীঠাকুর শ্রীশ্রীমা ও স্বামীজীর আনুষ্ঠানিক পট প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেদিন প্রাত্যহিক পূজা ও সন্ধ্যারতি শুরু হয়। সাপ্তাহিক শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত, শ্রীশ্রীমায়ের কথা, স্বামীজীর বানী ও রচনা এবং শ্রীমদভাগতাদি ও অন্যান্য শাস্ত্রগ্রন্থ পাঠ ও আলোচনা করা হয়। বাৎসরিক উৎসবাদির মধ্যে শ্রীশ্রীঠাকুর, শ্রীশ্রীমা, স্বামীজী ও অন্যান্য মহাপুরুষদের জন্মতিথি উৎসব ঠাকুরের কল্পতরু উৎসব পালন করা হয়। এছাড়াও দূর্গাপূজা, কালীপূজা, লক্ষীপূজা, সরস্বতীপূজা, শিবচতুর্দশী ব্রত করা পাশাপাশি গুরুপূর্ণিমা, মিশন প্রতিষ্ঠা দিবস, শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী, দোলপূর্ণিমা ইত্যাদিও পালন করা হয়শুধু কি তাই; বিভিন্ন উৎসবাদি ছাড়াও শিবজ্ঞানে জীবসেবা ও ব্রতকে ধারণ করে সমাজে পিছিয়ে পরা মানুষদের আর্থিক সহায়তা, বস্ত্র ও চিকিৎসাদির ব্যবস্থা করা হয়।
করোনাকালীন সময়ে ত্রাণ- সামগ্রী বিতরণ এবং শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় "স্বামী স্বাহানন্দ ফ্রি কোচিং সেন্টার", প্রতিবন্ধী ও দুস্থ শিশুদের সেবা সহায়তাও করা হয় এবং শিশুদের বৈদিক শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে “ সারদা- নিবেদিতা শিশু নিকেতন" পাশাপাশি যুবক ছেলে মেয়েদের স্বামীজীর ভাবাদর্শ চর্চার লক্ষে গঠন করা হয়েছে "বিবেকানন্দ স্টাডি সার্কেল”। এ ছাড়া অত্র অঞ্চলের গ্রামীণ নারীদের নিয়ে "সারদা সংঘ” প্রতিষ্ঠা করে সেলাই প্রশিক্ষনের মাধ্যমে নারীদের স্বচ্ছলতা আনয়নে সাহায্য করছে।
এ সকল বিষয়ে বিবেকানন্দ স্টাডি এন্ড ফিলানথ্রোপিক সেন্টার এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট শ্রীমান প্রকাশ চক্রবর্ত্তীকে সার্বিক পরামর্শ ও আর্থিক ভাবে সহযোগীতা করছেন পূজণীয় স্বামী চেতনানন্দজী মহারাজ, অধ্যক্ষ, বেদান্ত সোসাইটি অব সেন্টলুইস, পূজণীয় স্বামী সর্বদেবানন্দজী মহারাজ, অধ্যক্ষ, বেদান্ত সোসাইটি অব হলিউড, পূজণীয় স্বামী আত্মজ্ঞানানন্দজী মহারাজ, মিনিস্টার ইনচার্জ, বেদান্ত সোসাইটি অফ ওয়াসিংটন ডিসি, স্বামী সর্বপ্রিয়ানন্দজী মহারাজ, অধ্যক্ষ, নিউইঅর্ক বেদান্ত সোসাইটি। এছাড়া ডাঃ রুপাল সাহ, জনক প্যাটেল, ডাঃ মলয় দাস, মিসেস বাণী পাল, ডাঃ অনিমিতা সাহা, ডঃ ধনঞ্জয় সাহা, ইঞ্জিনিয়ার মলয় চ্যাটার্জী ও শ্বেতা চ্যাটার্জী, জণা গো স্বামী, শেফালী, ও রঞ্জিত দাস সহ আমেরিকার আরও অন্যান্য রামকৃষ্ণ মিশন- এর ভক্তমণ্ডলী। এই আশ্রম- এর সার্বিক পরিকল্পনা ও সাফল্যের জন্য ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ ও বাংলাদেশের গুরু মহারাজ পরম পূজ্যপাদ স্বামী পূর্ণাত্মানন্দজী মহারাজ দুইবার এই আশ্রম পরিদর্শন করেছেন এবং যাবতীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করছেন। আশ্রমের নতুন মন্দির নির্মাণ ও অন্যান্য প্রকল্পে চট্টগ্রাম রামকৃষ্ণ মিশনের পূজণীয় অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী শক্তিনাথানন্দজী মহারাজ নিরলসভাবে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান এবং তত্ত্বাবধান করে যাচ্ছেন। চট্টগ্রাম আশ্রম এর পরম ভক্ত ও ইঞ্জিনিয়ার শ্রী রামেশ্বর চৌধুরী বাবু প্রকৌশলী পণ্ডিত বাবুকে সকল রকম ইঞ্জিনিয়ারিং কাজে ও পরিকল্পনায় সুদূর চট্টগ্রাম থেকে প্রতিমাসে একবার করে এসে সহযোগীতা করে যাচ্ছেন। এছাড়া কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, বাগেরহাট, ফরিদপুর, দিনাজপুর, বালিয়াটি ও হবিগঞ্জ রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষগণসহ অন্যান্য পূজণীয় সন্ন্যাসীগণ ইতিমধ্যে এই আশ্রম পরিদর্শন করে তাদের মূল্যাবান ও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ প্রদান করছেন।
এই নতুন মন্দির নির্মাণে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে প্রকৌশলি শ্রীদীপঙ্কর পণ্ডিতকে। ইতিমধ্যে অত্র আশ্রমে 'স্বামী অক্ষরানন্দ ভবন” নামে একটি দুই তলা একটি সাধুনিবাস প্রকৌশলী দীপংকর পন্ডিতের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ এই আশ্রমটিতে ১২৭জন দীক্ষা প্রাপ্ত হয়েছেন। মাননীয় বাংলাদেশ সরকারের এলজিইডি দপ্তরের অধীনে আশ্রমে ভক্ত- সুভানুধ্যায়ীদের আগমন ও এলাকাবাসীর সুবিধার্থে নির্মাণ করা হচ্ছে "রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম রোড”, এতে বিশেষ সহযোগিতা করছেন শ্রী স্বপন পাল।
আশ্রমের সার্বিক পরিচালনায় ও ব্যবস্থাপনায় নিরলসভাবে কাজ করছেন ব্রহ্মচারী বিবেক। ও পরিশেষে, ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের ভাবগঙ্গাঁর ডেউ অত্র অঞ্চলের সকল শ্রেণির মানুষের কল্যাণ বয়ে আনবে এই আমাদের বিশ্বাস ও ব্রত।
জয় শ্রীরামকৃষ্ণ।।

আমাদের লক্ষ্য
উত্তর রোয়াইল রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের মূল লক্ষ্য হলো গ্রামীণ জনগণের সার্বিক উন্নয়ন এবং মানবিক কল্যাণে অবদান রাখা। আমরা শিক্ষার মাধ্যমে শিশু ও যুবকদের উন্নতি নিশ্চিত করি, চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীদের সহায়তা করি এবং আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে বিধবা মায়েদের সুরক্ষা প্রদান করি। নারীর স্বাবলম্বিতা এবং সমাজের সেবা নিশ্চিত করতে সেলাই প্রশিক্ষণ ও কম্পিউটার কোর্স পরিচালনা করছি। ধর্মীয় চর্চা ও মানসিক উৎকর্ষতার মাধ্যমে সকল স্তরের মানুষের চারিত্রিক উন্নয়ন সাধন আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা শিবজ্ঞানে জীবসেবার আদর্শকে অবিচলভাবে অনুসরণ করে সমাজের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।
উত্তর রোয়াইল রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম কার্যনির্বাহী পরিষদ

শ্রী মেঘলাল চক্রবর্তী
সভাপতি
শ্রী প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী
সহ-সভাপতি
শ্রী সুশান্ত কুমার সরকার
সহ-সম্পাদক
শ্রী সীমান্ত রায়
সহ-প্রচার সম্পাদক
শ্রী প্রকাশ চক্রবর্তী
সদস্য
শ্রী রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
সহ-সভাপতি
শ্রী গোপাল সূত্রধর
সহ-সভাপতি
শ্রী বিশ্বজিৎ ব্যানার্জী
কোষাধ্যক্ষ
শ্রী জগদীশ সিকদার
সদস্য
শ্রী স্বপন রায়
সদস্য
শ্রী অভিমন্যু রায়
সহ-সভাপতি
ব্রহ্মচারী বিবেক মহারাজ
সম্পাদক
শ্রী রিপন সূত্রধর
প্রচার সম্পাদক
শ্রী বিকাশ চক্রবর্তী
সদস্য
শ্রী আশুতোষ চক্রবর্তী
সদস্য